তাবুতে সাকিনা ও ইহুদী জাতির ইতিহাস।

  

আজ আমি আপনাদের জানাবো ইহুদী জাতির ইতিহাস এবং তাবুতে সাকিনা সম্পর্কে। ইহুদিরা কেন এখনো এই তাবুতে সাকিনা খুঁজে বেড়াচ্ছে? তাবুতে সাকিনা এর বাংলা অর্থ শরিয়ত সিন্দুক। এটা খোঁজার পেছনে ইহুদিদের কি ষড়যন্ত্র রয়েছে এবং এটা পাওয়ার পরে তারা কি করতে চাই? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আজ। আজও ইহুদিরা বিভিন্ন বাহানায় পুরো পৃথিবীতে খোদাই করে চলেছে শুধুমাত্র একটি সিন্দুকের জন্য। চলুন তাহলে জানা যাক এই রহস্যময় সিন্দুকটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? কোরআনের সূরা বাকারায় ২৪৮ নম্বর আয়াতে এই সিন্দুকের কথা উল্লেখ আছে। আল্লাহ পাক বলেন তাদের নবী আরো বলেন তালুতের নেতৃত্বের চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের কাছে একটি সিন্দুক আসবে। তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মনে সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আর তাতে থাকবে মুসা, হারুন, এবং তাঁদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাকো তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ উদাহরণ রয়েছে। এই আয়াতে তাবুত অর্থ হচ্ছে সিন্দুক এবং সাকিনা বলতে জিনিসপত্রকে বোঝানো হয়েছে। যা মানুষকে প্রশান্তি দান করে। এই সিন্দুকে এমন জিনিসপত্র ছিলো যা হৃদয়কে শক্ত এবং শান্তি দান করতে পারে। বলা হয়ে থাকে এই সিন্দুক সামসাদ নামক  লাকড়ির তৈরি ছিলো। এই সিন্দুকে হযরত আদম (আঃ) নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রগুলো রাখতেন। এই সিন্দুকটি উত্তরাধিকারসূত্রে একজনের পর একজন পেতে থাকেন। এবং শেষ পর্যন্ত হযরত ইয়াকুব (আঃ) এটিকে পেয়ে থাকেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর অন্য নাম ছিলো ইসরাইল (আঃ)। এবং উনার বংশকেই বলা হয় বনি ইসরাইল। অর্থাৎ ইসরাইলের সন্তান। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর এক পুত্রের নাম ছিল ইহুদা। এবং তার বংশ বিশ্বে ইহুদি নামে পরিচিত। এরপর সিন্দুকটি চলে যায় হযরত মুসা (আঃ) এর কাছে। এবং হযরত মূসা (আঃ) ও হারুন (আঃ) মারা যাওয়ার পরে তাদের পোশাক মোবারক তাদের পাগড়ী এবং আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সকল জিনিসপত্র এই সিন্দুকের মধ্যে সুরক্ষিত করে রাখা হয়। এরপর থেকে এই সিন্দুক চলে যায় ওই জাতির সরদারের দায়িত্বে। বনি ইসরাইলরা এই সিন্দুকের প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন এবং খেয়াল রাখতো। কারণ এই সিন্দুকের রহমতেই তারা বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পেতো। যখন কোন দুর্যোগ আসতো তারা এই সিন্দুকের পাশে বসে প্রার্থনা করতো। এবং এই সিন্দুকের উসিলায় তারা বিপদ থেকে  মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হতো। এমনকি তারা যখন যুদ্ধে যেত তখন তারা এই সিন্দুক যুদ্ধের একদম সামনে রাখতো। এর ফলে সকল সৈন্যরা সাহস ও প্রেরণা পেতো। এবং এই সিন্দুকের বরকতে তারা সকল বিপদ এবং বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে পারতো। বিশেষ উৎসব এবং অনুষ্ঠানের সময় তারা এই সিন্দুকটিকে সম্মানের সাথে কাঁধে করে নিয়ে বের করত। এই সিন্দুকের হেফাজত করার জন্য বিশেষ সৈন্যদলও নিয়োগ করা হয়েছিলো। বনি ইসরাইল খুবই অদ্ভুত জাতি ছিলো। একদিকে তারা সিন্দুকের এত যত্ন এত সম্মান করতো যা কল্পনা করা যায় না। আবার অন্যদিকে আল্লাহপাকের এত রহমত অশেষ নিয়ামত সব কিছু দেখার পরেও এর প্রতি তাদের কোনো কদর ছিল না। দিনের পর দিন তাদের লোভ বেড়েই চলছিলো। তারা জাতি হিসেবে খুবই জেদি, একঘেয়ে, কল্পনাতীত লোভী এবং অত্যাচারী জাতি ছিলো। দিন দিন তাদের লোভ বাড়তে থাকলো। তারা আরো বেশি অত্যাচারী হয়ে উঠলো  এবং আল্লাহ পাক ও তার অশেষ নিয়ামতকে ভুলতে শুরু করলো। তখন আল্লাহ পাক তাদের ওপর গজব নাযিল করলেন। এর ফল স্বরূপ এক যুদ্ধে ফিলিস্তিনি মুশরিকরা এটি ছিনিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু মুশরিকদের যে শহর ও যে জনপদে এটি রাখা হতো সেখানেই মহামারী হতে থাকতো ব্যাপকভাবে। আর সব জায়গায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়লো। এই রোগের ফলে অনেক দ্রুত অনেক মানুষ মারা যেতে শুরু করলো। এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য তারা সকল জ্ঞানী ব্যক্তিদের জমা করলো। তাদের কাছে এই আচমকা বিপদের কারণ জানতে চাইলে, তারা বলেন তাবুতে সাকিনা অসম্মানের ফলে আল্লাহপাক সকলের উপর গজব নাযিল করেছেন। কিন্তু তারা কোনভাবেই এই সিন্দুক বনি ইসরাইলের ফেরত দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। এবং তারা এই সিন্দুকটিকে অন্য একটি শহরে প্রেরণ করে দিলো। কিন্তু অন্য শহরে প্রেরণ করে দেওয়ার পরও সেই শহরে একই রোগের ভয়ানক প্রকপ শুরু হলো। এভাবে করে পরপর পাঁচটি শহর নিঃশেষ হয়ে গেল। অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নেয় এই সিন্দুকটিকে চালকহীন মহিষের গাড়িতে করে তুলে দেওয়ার। আল্লাহর রহমতে গাড়ি তখন বনি ইসরাইলের শহরের দিকে রওনা শুরু করলো। এবং গাড়িটা আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতারা চালিয়ে নিয়ে আসছিলো। সেই সময় হযরত সামাল (আঃ) ছিলেন বনি ইসরাইলদের নবী। নবী সামাল  (আঃ) আল্লাহর হুকুমে তালুদ নামের এক ব্যক্তিকে বনি ইসরাইলদের বাদশা বানিয়ে দিতে চাইলেন। কারণ এই ব্যক্তি ছিল খুবই নেক এবং সৎ। কিন্তু এতে বনি ইসরাইল বংশের সরদাররা বিরোধিতা করতে শুরু করলো। তারা তাদের নবীর কথা মানতে নারাজ ছিলো। নবীর উপদেশ প্রত্যাখ্যান করতে তারা একটি পরিকল্পনা তৈরি করলো। এবং তারা একদিন নবী কে বললো যদি আপনি সত্যিই আল্লাহর প্রেরিত নবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যেন তিনি আমাদের হারিয়ে যাওয়া তাবুতে সাকিনা যেন আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন। যদি আপনি তা করতে পারেন এবং আমাদের তাবুতে সাকিনা আমাদের কাছে ফিরে আসে তাহলে আমরা আপনার সকল কথা মেনে চলবো। সরদারদের কথা শোনার পরে নবী সামাল (আঃ) বললেন, “ঠিক আছে তোমাদের তাবুতে সাকিনা কাল সকালের মধ্যেই তোমাদের কাছে পৌঁছে যাবে”। এটা শুনে সকল সরদার নবীকে নিয়ে খুবই হাসি তামাশা করলো। কারন তারা খুব ভালো ভাবেই জানতো জালুদদের হাত থেকে তাবুতে সাকিনা ফিরিয়ে আনা একেবারেই অসম্ভব। পরের দিন সকালে মহিষের গাড়িতে  তারা তাদের তাবুতে সাকিনা ফিরে পেলো। এবং নিজেদের কথামতো তালুদকে নিজেদের বাদশা হিসেবে মেনে নিলো। তাবুতে সাকিনা ফিরে পাওয়ার ফলে বনি ইসরাইলদের অবস্থার আরও উন্নতি হতে লাগলো। কিন্তু তাদের আমলের কোনো পরিবর্তন হলো না। এরপরে হযরত দাউদ (আঃ) এর সময় চলে আসলো। এবং তিনি সকলের জন্য ইবাদাত করার একটি  স্থান নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলো। এবং পরবর্তীতে তার পুত্র হযরত সোলাইমান (আঃ) পিতার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এবং সেই ইবাদত খানায় তাবুতে সাকিনা স্থাপন করা হলো। ইবাদত করার যে ঘরে তাবুতে সাকিনা স্থাপন করা হয়েছিলো সে স্থানে আল্লাহর নবী এবং বড় বড় আলেমগণ ব্যতীত অন্য সকল সাধারণের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছিলো। হযরত সুলাইমান (আঃ) মৃত্যুবরণ করার পরে তার আংটি মোবারক ওই সিন্দুকের ভিতরে সুরক্ষিতভাবে রেখে দেওয়া হয়েছিলো। যখন হযরত জাকারিয়া (আঃ) এর সময় এলো তখন অজ্ঞানতার অন্ধকারে বনি ইসরাইলরা এতটাই ডুবে গিয়েছিলো যে, আল্লাহর পয়গম্বরদের কথা অমান্য করাটা এই গোষ্ঠীর জন্য খুবই সামান্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যখন জাকারিয়া (আঃ) কে তারা মেরে ফেলে ও তার পুত্র হযরত ইয়াহিয়া  (আঃ) কে নির্মমভাবে হত্যা করে তখন আল্লাহ তায়াল্লাহ তাদের ওপর খুবই নারাজ হন। হযরত ইয়াহিয়া  (আঃ) এর মৃত্যুর কিছুদিন পর ইরাকের বাদশা বাক্ত নাছের ইসরাইলের ওপর হামলা করে দেয়। লক্ষ লক্ষ ইহুদিদের হত্যা করে ফেলে ও গোলাম বানিয়ে নেয়। এবং পুরো ইসরাইল ধ্বংস করে ফেলে। এমনকি বাইতুল মুকাদ্দাস সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলে। এবং তাতে রাখা তাবুতে সাকিনা কব্জা করে নেয়। এবং নিজের সাথে ইরাক নিয়ে যায়। এই সময় ছিলো বনি ইসরাইলের সকল মানুষ ও বনি ইসরাঈলদের জন্য সর্বকালের সব থেকে কঠিন সময়। কিন্তু বাক্ত নাছের পরবর্তীতে তাবুতে সাকিনার কি করেছিলো? তা আজ পর্যন্ত জানা যায়। তাবুতে সাকিনা সারা জীবনের জন্য ইহুদিদের কাছ থেকে হারিয়ে গেলো। এবং ইহুদিয়া যাদের বলা হতো আল্লাহর সবথেকে প্রিয় গোষ্ঠী তারা সারা জীবনের জন্য আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হলো। আজকে 2000 বছর পরে আবারো ইসরাইলের ইহুদিরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহর সকল নেয়ামত ও রহমত হারিয়ে ফেলার পরেও এখনো তারা সেই আগের মতো একঘেয়ে, লোভী, অত্যাচারী ও অহংকারী হয়ে গিয়েছে। এমনকি এখনও পর্যন্ত তারা আল্লাহর সব থেকে প্রিয় গোষ্ঠী হওয়ার ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে আছে। তারা এখনো পর্যন্ত মসজিদুল আকসার পশ্চিম দিকের দেয়ালকে ধরে কান্নাকাটি করে। এবং অতীতের সব কিছু চিন্তা করে কান্নাকাটি করাটাই যেন হয়ে গেছে তাদের বর্তমানের ইবাদত। এই মসজিদুল আকসার পশ্চিম দেয়ালকেই হযরত সোলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ চিহ্ন হিসেবে তারা ধরে থাকে। ইহুদিদের এই পুরো গোষ্ঠী এখনো অনেক অবুজ। এত কিছু হওয়ার পরেও তারা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল না হয়ে এখনো তারা তাবুতে সাকিনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এবং তারা অপেক্ষা করছে তাদের শেষ অধিনায়কের জন্য। যার নেতৃত্বে ইহুদীরা আরো একবার পুরো বিশ্বের উপর শাসন করতে পারবে। সেই এক চোখ অন্ধ দাজ্জালের প্রতি তাদের ভালোবাসা এতটাই বেশি যে পুরো পৃথিবীতে তারা এই এক চোখের প্রচার করে বেড়ায়। এবং শুধুমাত্র দাজ্জালের সুবিধার জন্য তারা এমন এমন পদ্ধতির আবিষ্কার করছে যার ফলে সাধারণ মানুষ যেন খুব সহজেই দাজ্জালকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেয়। ইংরেজি ইহুদিসহ অনেক গবেষকরা গবেষণা করে ধারণা করেন যে তাবুতে সাকিনা হযরত সুলাইমান (আঃ) এর মহলের কোনো একটি অংশে দাফন করা আছে। কিন্তু সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই মহলটি এখনো ফিলিস্তিনের কোথাও অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে। তারা তাবুতে সাকিনা কব্জা করার জন্য সুলাইমান (আঃ) এর মহল খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং এর ফলে কিছুদিন পরপরই বায়তুল মোকাদ্দাসে তারা খোদাই করতে থাকে।


নাইমুল ইসলাম

পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube

1 comment:

  1. তথ্য-নির্ভর ভালো পোষ্ট

    ReplyDelete

পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.