বাংলাদেশী বংশউদ্ভুত ডাক্তার ফারজানা হোসেন।

 

বাবা ডাক্তার হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকে হাসপাতাল ফারজানার খুবই পরিচিত একটা জায়গা ছিলো। হয়তো সে কারণে মাত্র ৫ বছর বয়সে সে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিয়েছিলো। ফারজানা ঠিক করেছিল সে বড় হয়ে বাবার মত একজন দক্ষ বড় ডাক্তার হবে। ১৯৭০ সালে তার বাবা স্কলারশিপ পাওয়ার পর ফারজানা সপরিবারে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য চলে আসে। ছোটবেলায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সেই ধারাবাহিকতাতেই ফারজানা ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলসের স্কুল অফ মেডিসিন বিভাগে পড়াশোনা শুরু করে। তখনো ডাক্তারি পড়া তার কাছে ছিল শ্রেপ ছোটবেলা থেকে ঠিক করে রাখা একটি সখ। তবে সেখানে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষেই তার সাথে খুবই বেদনাদায়ক একটি ঘটনা ঘটে যায়। এরপরে ফারজানা ঠিক করে ডাক্তারি পড়াটাকে সে খুবই সিরিয়াসলি নেবে। এবং এই পেশায় যতটা উপরে যাওয়া সম্ভব ততটা উচ্চতার শিখরে উঠবেই। আসলে সে সময় ফারজানার মা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায় কাতরাচ্ছিলেন। এর মাঝে প্রতি সপ্তাহে ফারজানা একদিন ছুটি পেতেন। আর সেদিনই ২৫০ মাইল যাত্রা করে মাকে দেখতে ছুটে যেতেন তিনি। এর মাঝে একদিন তার মায়ের অবস্থা একদমই মুমূর্ষ হয়ে যায়। পরের দিন আবার তার ইউনিভার্সিটিতে একটা জরুরী ক্লাস। ক্লাসে যাবে নাকি মায়ের কাছে যাবে এই ভেবে সন্দেহান ফারজানা। এর মাঝে তার মা তাকে ডেকে বললো, তুমি চলে যাও আমি চাই তুমি একজন বড় ডাক্তার হও এবং মানুষের সেবা করো আমায় নিয়ে ভেবনা আমি ঠিক হয়ে যাবো। মায়ের কথা মত ফারজানা ফেরত চলে গেল। সে নিজেও জানতো না এই ছিল তার মায়ের সাথে শেষ দেখা। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর ফারজানার মা মারা যান। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মাকে হারানোর ফারজানার কান থেকে এক সেকেন্ডের জন্য মায়ের শেষ কথা সরেনি। মায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সে বড় ডাক্তার হবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে। দুই যুগেরও বেশি সময় নিয়ে আজ সে মায়ের ইচ্ছাটাকে বাস্তবায়িত করেছে। সে আজ অনেক বড় ডাক্তার। কোনো হাসপাতাল বা শহর নয় পুরো ব্রিটেনের সেরা জেনারেলি প্রাকটিশনার এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। বৃটেনের স্বাস্থ্যসেবাকে বিশ্বের সেরা বললেও ভুল হবে না। আর সেই স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের হাজার হাজার কর্মীকে পেছনে ফেলে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিজের কপালে পড়েছেন ডাক্তার ফার্জানা হোসেন। সেরা জেনারেল প্রাকটিশনার নির্বাচিত হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ শহরের বিলবোর্ডেও তার ছবি দেখা মিলেছে। তবে এতদূর আসার পথটা যে খুব বেশি মসৃণ ছিল তেমন ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। তার জীবনে বহু খারাপ সময় এসেছে। তবে সে সময় গুলোতে ভেঙে না পড়ে নিজের মায়ের কথা ভেবে তিনি শক্তি যুগিয়েছেন। নিজের দুঃসময়ে মাকে স্মরণ করে আত্মবিশ্বাস আর শক্তি আহরণ করতেন ফারজানা। তবে এখন সেসব দিন ফুরিয়ে গেছে। প্রজেক্ট সার্জারি নামক একটি মিশনে কাজ করছেন ফারজানা। এ প্রজেক্ট এর আওতায় গত ১৮  বছর ধরে হিউম্যান নিউহেম শহরে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষকে সেবা দিয়ে সুস্থ করেছেন এই মহীয়সী নারী। এই প্রোজেক্টের নেতৃত্বে ছিলেন পিটার জোনাস নামক একজন সিনিয়র ডাক্তার। ২০১৪  সালে পিটারের মৃত্যুর পর ফারজানা নিজেই এর নেতৃত্ব দান শুরু করেন। এরপর জন্য প্রজেক্ট সার্জারি আরো বেশি সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। তার নেতৃত্বে আসার পর থেকে প্রজেক্ট  সার্জারির এর সুনাম সমগ্রহ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফারজানা কখনো রোগীদের রোগী ভাবেন না সব সময় ভাবেন এ রোগীটা কারোর মা-বাবা, কারোর ভাই, কারোর বোন। তিনি সবাইকে নিজের পরিবারের সদস্য ভেবেই চিকিৎসা করেন। কাজের প্রতি ভালোবাসা আর রোগীর প্রতি এরকম আন্তরিকতায় ফারজানাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও ফারজানার প্রতি শুভকামনা রইল। আমরা আশা করি সে কাজের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে সে আরো গর্বিত করবে।



নাইমুল ইসলাম

পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube

No comments

পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.