ইনকা সভ্যতার ইতিহাস।


পেরুর কুজকো এলাকায় সুপ্রাচীন ইনকা সভ্যতার সূচনা হয়েছিলো একটি আদিবাসী হিসেবে। আন্দিজ পর্বতমালার পার্বত্য ভূ-ভাগে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিলো। সম্মিলিতভাবে এসব সভ্যতাকে মূলত আন্দীয়  সভ্যতা বলা হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য আমেরিকা থেকে আগত একদল ভাগ্যানেষি পেরুর কুজকো উপত্যকায় এসে বসবাস শুরু করে। আগত এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছিলো কৃষক, কারিগর, কামার ইত্যাদি পেশার মানুষ। স্থানীয় অধিবাসীদের পরাজিত করে হাতুন তাপাক নামের এক সাহসী যোদ্ধা ১৩৯০ সালের দিকে কুজকো উপত্যকায় একটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এই রাজত্বের নাম হয় ইনকা এবং রাজা হাতুন তামাক নিজেকে 'ভিরাকোচা ইনকা' ( জনগনের ঈশ্বর ) নামে ভূষিত করেন। 'ইনকা' শব্দটির অর্থ 'সূর্যের সন্তান'। তারা যুদ্ধবাজ জাতি ছিলো। ইনকা সভ্যতা বর্তমানে পেরু, ইকুয়েডর, বলিভিয়া আর্জেন্টিনা, চিলি এবং কলম্বিয়ার একটি বড় অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিলো।
ইনকা রাজ্যের রাজা ছিলেন সূর্যদেবতা 'ইনটির' প্রতিনিধি। তিনি ছিলেন সমস্ত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। রাজ্য পরিচালনায় রাজাকে সহায়তা করতেন অভিজাত শ্রেনি। তারা সকলেই ছিলেন রাজার আত্মীয়। প্রশাসনিক কাজ করার জন্য ইনকা রাজ্যটিকে চারটি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিলো। আর কুজকো ছিলো প্রশাসনের প্রধান কেন্দ্রস্থল। রাজার রক্তের আত্মীয়দের মধ্য থেকে প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগে একজন করে নিয়োগ দেয়া হতো।

নগর ও সমাজ

ইনকারা পাথর দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ করতো। তারা রাস্তা, বাঁধ ও সেতু নির্মাণে দক্ষ ছিলো। রাজধানী কুজকো থেকে ইনকা রাজ্যের সর্বত্র বড় বড় চওড়া রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিলো। নদীর উপর তারা ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করেছিলো। ইনকারা চাকাযুক্ত গাড়ির ব্যবহার জানতো না। তারা লামাকে ভারবাহী পশু হিসেবে ব্যবহার করতো। জলপথে যাতায়াতের জন্য ইনকারা ভেলা, ডিঙি নৌকা এবং পালতোলা নৌকা ব্যবহার করতো। ১৩ বছর বয়সে ইনকা কিশোর-কিশোরীদের একটি বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা নেয়া হতো। পরীক্ষায় যারা উন্নীত হতো তাদেরকে প্রকাশক হিসেবে তৈরি করার জন্য পাঠানো হতো বিশেষ এক ধরনের স্কুলে। সেখানে তাদেরকে শেখানো হতো দড়ির গিঁটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের কৌশল 'কিপু', নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা, ধর্ম ও গনিত। এই স্কুল থেকে যারা উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হতো তাদেরকে কৃষি, তাঁতের কাজ, অলংকার তৈরি বা সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। ইনকা রাজ্যের কিছু অঞ্চলে মৃতদেহকে মামি করে রাখা হতো।

অর্থনীতি

ইনকা ছিলো কৃষিভিত্তিক সভ্যতা। পাহাড়ের গায়ে তারা ফসল ফলাতো। তারা প্রধানত ভুট্টা, আলু, মরিচ, শাক-সবজি, নানা প্রকার লতাগুল্ম ইত্যাদি চাষ করতো। পরবর্তী সময়ে এখান থেকেই আলু পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইনকারা পশুপালন করতো। তারা উটজাতীয় পশু লামা, আলপাকা ইত্যাদি পপ্রাণীকে পোষ মানাতো। ইনকা সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একটি দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিলো। ইনকা সভ্যতায় টাকার প্রচলন ছিলো এবং ভোগ্যপন্য ও বিলাসদ্রব্যের ব্যবসাবাণিজ্য বিস্তৃত লাভ করেছিলো। এই সভ্যতায় কর ব্যবস্থার প্রচলন ছিলো। বলা হয়ে থাকে যে, কর উত্তোলকরা বিভিন্ন পশু, বৃদ্ধ বা দাসের বলি উৎসর্গ হিসেবে গ্রহণ করতো।

মাথা পিচু

ইনকা সভ্যতার স্বর্ণযুগে ১৪৬০ সালে মাচু পিচু নগরীটি তৈরি হয়। মাথা পিচুর অর্থ হলো 'প্রাচীন উপতক্যা'। এ স্থাপনা পেরুর উরুবাম্বা উপতক্যায় আন্দিজ পর্বতমালার ৭,৯৭০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ইনকা সভ্যতার প্রধান নিদর্শন এই মাচু পিচুকে বলা হয় 'ইনকার হারানো নগরী'। ১৪৬০ সালে এ নগরীটি তৈরি করারও প্রায় ১০০ বছর পর একে ইনকা সম্রাটরা দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করেন। মাচু পিচুতে প্রায় ১৪০টি স্থাপনা ছিলো।

নাইমুল ইসলাম

পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube

No comments

পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.