মায়া সভ্যতার ইতিহাস।



খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে কৃষিজীবী একদল মানুষ আমেরিকায় গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং সেখানে মায়া সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। মায়া সভ্যতার ভৌগোলিক সীমা মায়া অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলীয় মধ্য আমেরিকার অঞ্চল, যা বর্তমান গুয়াতেমালা, বেজিল, এলসালভাদর এবং পশ্চিমে হন্ডুরাস জুড়ে মায়া সভ্যতার বিস্তৃতি ঘটেছিলো। ২৫০ থেকে ৯০০ সালের মধ্যে মায়া সভ্যতা সর্বচ্চো উন্নতির পর্যায়ে পৌছায় এবং এরপর থেকে এর পতন ঘটে। মায়া সভ্যতার মানুষের প্রধান জীবিকা ছিলো কৃষি। তারা বন কেটে জমি পরিষ্কার করতো এবং সেচের সাহায্যে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতো। ভুট্টা ছিলো তাদের প্রধান খাদ্যশস্য। মায়া সভ্যতায় সাধারণ মানুষের জীবন ছিলো খুবই কষ্টকর। চাষিরা সারাদিন চাষাবাদ করার ফাঁকে দিনে একবার মাত্র বাড়িতে ফিরে আস্তো গোসল করে খাওয়ার জন্য। গোসল করাটা ছিলো তাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও মায়ারা অত্যন্ত কঠিন জীবনযাপন করতো, তবুও তারা বিনোদনের ব্যবস্থা করতো। তারা নাচতে, গাইতে এবং খেলতে খুবই উৎসাহ পেতো।

সমাজ

মায়ারা মেক্সিকোর বিভিন্ন স্থান জুড়ে বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মাধ্যম এক বিশাল সম্রাজ্য নির্মাণ করেছিলো। প্রত্যেক শহর ছিলো এক একটি নগররাষ্ট্র। প্রত্যেক নগররাষ্ট্রের একেবারে মাঝখানে সূর্যমন্দির তৈরি করাটা ছিলো মায়া রীতি। সূর্যমন্দির ছিলো পিরামিডের মতো। প্রত্যেক নগররাষ্ট্রে আকজন করে রাজা বা আহাও থাকতেন। তিনি এক বিরাট রাজপ্রাসাদে বসবাস করতেন। প্রত্যেক রাজপ্রাসাদের উত্তর প্রান্তে থাকতো একটা বানিজ্য কুঠি, বড় রাস্তা এবং দক্ষিণ প্রান্তে থাকতো পিরামিড ও কৃষিজমি। মায়া সম্রাজ্যের সেরা কৃষিজমির ধারেই রাজপ্রাসাদের অবস্থান থাকতো, যাতে সেরা খাদ্য রাজার কাছে দ্রুত পৌঁছে যেতো। মায়া সভ্যতায় রাজা রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় উভয় ক্ষেত্রেই সর্বচ্চো নেতা ছিলেন। এরপর ছিলো অভিজাত ও পুরহিতদের স্থান। এই সভ্যতায় পুরোহিতরা খুবই ক্ষমতাশীল ছিলেন। বণিক, কারিগর ও কৃষকদের অবস্থান ছিলো তৃতীয় শ্রেণিতে। সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরের মানুষ ছিলো ভূমিদাস ও ক্রীতদাসরা। মায়া সভ্যতায় ক্রীতদাসদের কঠোর পরিশ্রম করতে হতো, কারন সেখানে ভারবাহী পশু বা চাকাযুক্ত গাড়ির প্রচলন ছিলো না।

লিখন পদ্ধতি

মায়া সভ্যতায় মানুষ চিত্রলিপির মাধ্যমে লিখতো। তারা পশুর লোম দারা তৈরি তুলি এবং পাখির পালক দ্বারা তৈরি কলম দিয়ে লিখতো। তাদের লেখার বিষয়বস্তু ছিলো  ছিলো ধর্ম ও বর্ষপঞ্জিকা সংক্রান্ত। প্রতি ২০ বছর অন্তর মায়া পুরোহিতরা একটি পাথরের দেয়াল নির্মাণ করে তাতে পূর্ববর্তী ২০ বছরের ঘটনাপঞ্জি লিখে রাখতো। এছাড়া মায়ারা ভবনে, স্মৃতিস্তম্ভে, মন্দিরে, গয়নায়, পাত্রের গায়ে এবং বইয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লিখে রাখতো। মায়া সভ্যতায় বিশেষ এক ধরনের কাগজ দিয়ে বই তৈরি করা হতো এবং তা কাগজের পাখার মতো ভাজ করে রাখা হতো।

ধর্ম

মায়ারা বহু দেবতায় বিশ্বাস করতো। তারা দেবতাদের ভয়ে সর্বদায় ভীত থাকতো। মায়াদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা ছিলেন 'ইটজাম্না'। তিনি ছিলেন সৃষ্টির দেবতা। মায়া পুরাণ অনুসারে তিনিই এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা। মায়ারা বিশ্বাস করতো, তিনি স্বর্গের দেবতা। মায়া বিশ্বাস অনুসারে রাজা ছিলেন ঈশ্বর ও মানুষদের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী। এ কারণে রাজার যেকোনো আদেশকেই তারা ঈশ্বরের আদেশ হিসেবে মান্য করতো। মায়া সম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালি মানুষ ছিলেন পুরোহিত। মায়ারা মৃত্যুপরবর্তী জীবন আছে বলে বিশ্বাস করতো।


নাইমুল ইসলাম

পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube

No comments

পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.