ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস।



সিরিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে অ্যামোরাইট নামের এক জাতি বাস করতো। এরা খ্রিস্টপূর্ব ১৮৯৪ অব্দে মেসোপটেমিয়ার আসে সুমের ও আক্কাদ নগরীর মাঝামাঝি ব্যাবিলন নামক স্থানে একটি সভ্যতা গড়ে তোলে। এটিই ব্যাবিলনীয় সভ্যতা নামে পরিচিত। ব্যাবিলন শব্দটির অর্থ 'দেবতার নগরী'। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী দুটি যেখানে সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছে সেখানেই গড়ে তোলা হয়েছে এই নগরী। ব্যাবিলনীয় সভ্যতার স্থপতি এবং প্রথম রাজা ছিলেন বিখ্যাত অ্যামেরইট নেতা সুমুয়াবাম। নগরীর ঘর-বাড়িগুলো রোদে শুকানো ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো। প্রতিটি নগরে নির্মাণ করা হয়েছিলো জিগগুরাট। বরিসিবাপ নগরের জিগগুরাটটি ছিলো সাত তলাবিশিষ্ট। ৬৫০ ফুট উঁচু পিরামিডের মতো জিগগুরাটে ছিলো বিচার কক্ষ, স্কুল কক্ষ ও সমাধি।

সমাজ

ব্যাবিলনীয় সমাজ ৩ শ্রেণিতে বিভক্ত ছিলো। উঁচু শ্রেণিতে ছিলো রাজা, পণ্ডিত, পুরোহিত ও সৈন্য। এদের নিজস্ব জমি ছিলো শিল্পী ও স্বাধীন ব্যাবসায়ীরা। আর নিম্নি শ্রেণিতে ছিলো কৃষক, সাধারণ শ্রমিক ও দাসরা। ব্যাবিলনীয় সমাজে যুদ্ধবন্ধীদের দাস করা হতো।

রাজা হাম্মুরাবি

ব্যাবনলীয় সভ্যতার রাজা হাম্মুরাবি একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি ছিলেন ব্যাবিলনের ষষ্ঠ রাজা। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ১৭৯২ অব্দে ব্যাবিলনের রাজা হন। তিনি খণ্ড-বিখণ্ড নগররাষ্ট্রগুলোকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনামলকে ব্যাবিলনের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয়। ব্যাবিলনের সর্বাধিপতি এ রাজা খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ অব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

ধর্ম

ব্যাবিলনীয়রা বহু দেবতার বিশ্বাসী ছিলো। এদের প্রধান দেবতা ছিলো মারডুক, আর প্রধান দেবী ছিলো। ইশতার। এছাড়া উল্লেখযোগ্য দেবতারা ছিলেন তাম্মাজ, শামাশ, নারগাল, ইউস ও নাম্মর। এসব দেবতা মন্দিরে বাস করতো এবং মানুষের মতো খাবার খেতো। ব্যাবিলনীয়রা পরকালে বিশ্বাস করতো না। এরা কুসংস্কার এবং জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী ছিলো। এদের কেন্দ্রীয় মন্দিরের নাম ছিলো জিগগুরাট।

সভ্যতার অবদান

ব্যাবিলনীয়রা গণিতশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিদ্যায় যথেষ্ট উন্নতি সাধন করে। ধারাপাত ও নামতা তাদেরই আবিষ্কার। তারা জ্যামিতির বিভিন্ন সূত্র আবিষ্কার করে। তারা জমি ও নগর পরিমাপ পদ্ধতি আবিষ্কার করে। চাঁদ পর্যবেক্ষণ করে তারা একটি পঞ্জিকা তৈরি করেছিলো। চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিলো।

আইন

ব্যাবিলনীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো আইনের ক্ষেত্রে। আইন সংকলন হিসেবে ব্যাবনলীয় রাজা হাম্মুরাবি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পুর্ণাজ্ঞ আইন সংকলন করেন হাম্মুরাবি, যা 'হাম্মুরাবি কোড' নামে পরিচিত। তাঁর সংকলিত আইন একটি ৮ ফুট লম্বা পাথরের গায়ে খোদাই করা হয়েছিলো। হাম্মুরাবির আইনে কঠোর শাস্তির বিধান ছিলো। সামান্য অপরাধের জন্য মৃত্যু দণ্ড দেয়া হতো। যেমন- মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে শাস্থি ছিলো মৃত্যুদণ্ড। হাম্মুরাবির আইনে নারীদের দ্বিতীয় বিয়ের অধিকার এবং সম্পত্তি ও ব্যাবসায়- বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ অধিকার প্রদান করা হয়েছিলো। হাম্মুরাবির এই কঠোর আইনের কারণেই তাঁর রাজ্যে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
নাইমুল ইসলাম

পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube

1 comment:

  1. গিলগামেশ কোন সভ্যতার? সুমেরীয় নাকি ব্যাবিলনীয়?কেউ সঠিক উত্তরটি জেনে থাকলে জানাবেন উপকৃত হবো:') (TIA)

    ReplyDelete

পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.