অ্যাসিরীয় সভ্যতার ইতিহাস।


খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে ব্যাবিলন থেকে প্রায় ২০০ মাইল উত্তরে টাইগ্রিস নদীর তীরে আসুর নগরে অ্যাসিরীয়রা সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৬২ অব্দে তারা ব্যাবিলন দখল করে অ্যাসিরীয় সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে এবং আসুরকে রাজধানী করা হয়। আসুর শব্দের অর্থ সুজলা সমতল ভূমি। হাম্মুরাবির শাসনকাল পর্যন্ত আসুর ছিলো ব্যাবিলনীয় সম্রাজ্যের একটি করদরাজ্য। অ্যাসিরীয় রাজারা অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁরা দেবতা আসুরের নামে দেশ শাসন করতেন এবং স্বৈরাচারী ছিলেন। রাজারা সিংহ শিকার করতেন এবং এর মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করতেন। অ্যাসিরীয় সভ্যতায় চরম নিষ্ঠুরতা এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত হতো। সে সময় মানুষের হাত, পা, কান ইত্যাদি কেটে ফেলা হতো, এমনকি চোখ তুলে নেয়া ছিলো খুবই সাধারণ ঘটনা। আরও ভয়াবহ ঘটনা হলো জীবিতাবস্তায় মানুষের চামড়া তুলে নেয়া এবং মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারা। অ্যাসিরীয় সভ্যতাটি খ্রিস্টপূর্ব ৬০৫ অব্দ পর্যন্ত টিকে ছিলো। অ্যাসিরীয়দের পতনের প্রধান কারণ ছিলো তাদের নিষ্ঠুরতা।

যোদ্ধা জাতি 

অ্যাসিরীয় সভ্যতায় পুরুষদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক ছিলো। অ্যাসিরীয় সেনাবাহিনী হালকা পদাতিক, ভারী পদাতিক, অশ্বারোহী ও রথ বাহিনী- এই চার ভাগে বিভক্ত ছিলো। এরা ব্যাপকভাবে ঘোড়ার ব্যবহার জানতো। অ্যাসিরীয় সেনাবাহিনীর রণকৌশল ও যুদ্ধ পরিকল্পনা ছিলো তিনটি ভাগে বিভক্ত- প্রতিরোধ, আক্রমণ ও আত্মরক্ষা। পৃথিবীর ইতিহাসে তারাই সর্বপ্রথম লোহার অস্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলো। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে লোহার তরবারি, শিরস্ত্রাণ, ফলা, বর্ম, তীর-ধনুক ইত্যাদি ব্যবহার করতো। চাকার ওপর স্থাপিত পাথর নিক্ষেপক যন্ত্র ছিলো তাদের নতুন উদ্ভাবিত অস্ত্র। তাছাড়া তারা দুর্গের দুর্ভেদ্য দেয়াল ভাঙ্গার যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলো, যেটি ছিলো এক ধরনের ট্যাংক। নিজেদের দুর্গ রক্ষার জন্য তারা গোলান্দায বাহিনী গঠন করেছিলো। তারা শক্তিশালী গুপ্তচর ব্যবস্থাও চালু করেছিলো। সেই প্রাচীন যুগেও অ্যাসিরীয়দের সৈন্যবাহিনী অ তাদের যুদ্ধকৌশল ছিলো বেশ আধুনিক।

ধর্ম 

অ্যাসিরীয়রা বহু দেবতার বিশ্বাসী ছিলো। তাদের প্রধান দেবতা ছিলো অসুর। তারা ব্যাবিলনীয় দেবতা মারডুককে অসুরের দাসে পরিণত করেছিলো। তারা পরকালে বিশ্বাসী ছিলো না। তারা ভূত-প্রেত ও মন্ত্র-তন্ত্র বিশ্বাস করতো। তাদের সমাজে পুরোহিতদের তেমন একটা প্রাধান্য ছিলো না।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য 

স্থাপত্য শিল্পে অ্যাসিরীয়রা বেশ দক্ষ ছিলো। তারা পাথর দিয়ে ঘরবাড়ি এবং সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করতো। সম্রাট দ্বিতীয় সারগন তাঁর রাজধানী খোরশাবাদে বিশাল এক সুন্দর প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন। প্রাসাদটি ছিলো প্রাচীরে ঘেরা প্রায় এক মাইল বর্গাকার আয়তনের একটি দুর্গ। বিশাল া স্থাপনায় ছিলো প্রাসাদ, সিংহাসন কক্ষ ও রাজকীয় মন্দির। অ্যাসিরীয়রা চুনাপাথর ভাস্কর্য নির্মাণ করতো। পাথর ছাড়াও ভাস্করগণ ব্রোঞ্জ দিয়েও অনেক ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন।

অন্যান্য অবদান 

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অ্যাসিরীয়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূগোল, জ্যামিতি ও সাহিত্যে অ্যাসিরীয়রা উন্নতি করেছিলো। পৃথিবীকে সর্বপ্রথম তারা অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে ভাগ করেছিলো। তারাই প্রথম বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করে। চিকিৎসাবিদ্যায়ও তাদের বিশেষ অবদান ছিলো। তারা পাঁচ শতাধিক ভেষজ ও খনিজ ওষুধের তালিকা ও এর গুনাগুন নির্ণয় করেছিলো। সম্রাট আসুরবানিপাল রাজধানী নিপ্পুরে একটি বৃহৎ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যাকে এশিয়ার প্রথম গ্রন্থাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। এ গ্রন্থাগারে ২,২০০- এরও বেশি মাটির চাকতির বই ছিলো। বর্তমানে এর অধিকাংশই ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত করা আছে।
নাইমুল ইসলাম

পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube

No comments

পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.