আইয়ুব বাচ্চুর জীবনী শুরু থেকে শেষ!
বাংলাদেশের কিংবদন্তী ও জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু।তিনি আর আমাদের মাঝে নেই কথাটি বলতে হৃদয় কেঁপে ওঠে,আঁটকে যায় কণ্ঠস্বর।১৮ অক্টোবর ২০১৮ অজানা পথের উদ্দেশে পাড়ি জমান তিনি।জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন বুক ভরা অভিমানে।অপূর্ণ রেখে গেছেন অনেক স্বপ্ন।
জন্ম ও ছোটবেলা: গুণী এই শিল্পী ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে্র (বর্তমান বাংলাদেশ)চট্টগ্রাম শহরের এক বনেদী হাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার ডাক নাম ছিলো রবিন। চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে আইয়ুব বাচ্চুর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয়। ছোটবেলা থেকেই বাউন্ডেলে ছিলেন রবিন।তার এই স্বভাবের জন্য সংসার তাঁকে স্পর্শ করেনি কখনোই।অন্য সুর ছিলো তার মনে।৯-৫টা চাকরি করার জন্য জন্ম হয়নি তার।তার জন্য অপেক্ষায় ছিলো অন্য পথ চলা।সহজ ছিলোনা সেই পথ চলা।জোয়ারের বিপরীতে চলার সাহস সবার থাকেনা।একদিন বিটিভিড় একটি প্রোগ্রামে পপ সম্রাট আজম খানকে গান গাইতে দেখলেন।সেই প্রোগ্রামে একজন অসাধারণ দক্ষতায় গীটার বাজাচ্ছিলেন।তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী গিটারিস্ট নয়ন মুন্সি।সেই বাজানো দেখে তিনি ঠিক করে ফেলেন জীবনে আর কিছুই চাননা শুধু এইভাবে গীটার বাজাতে চান।সেই থেকে শুরু গীটারের পেছনে ছোটা যা ছিলো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
সঙ্গীত জীবন: আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীত জীবনের শুরু হয়েছিলো ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডে।১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন।১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রক্তগোলাপ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম একক এ্যালবাম।এই এ্যালবাম তেমন একটা সারা ফেলেনি।তিনি সফল হন তার দ্বিতীয় এ্যালবাম ময়না দিয়ে যে এ্যালবামটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পেয়েছিলো।১৯৯১ সালে আইয়ুব বাচ্চু এলআরবি গঠন করেন।১৯৯২ সালে এলআরবির প্রথম এ্যালবাম।এই এ্যালবামের শেষ চিঠি,হকার,ঘুম ভাঙ্গা শহরে খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো।১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় এ্যালবাম সুখ ও তবুও বের হয়। "চলো বদলে যাই" বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অবিহিত কড়া হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে কষ্ট কাকে বলে, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, অবাক হৃদয়, ও আমিও মানুষ। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ঘুমন্ত শহরে প্রকাশিত হয়। তিনি অনেক বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। "অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে" বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তাঁর গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।
বিয়ে ও সংসার: তিনি ফেরদৌস চন্দনাকে বিয়ে করেন।তাঁদের পুত্র ফাইরুজ ও কন্যা তাজওয়ার।
স্টুডিও: এবি কিচেন নামে তাঁর একটি ব্যাক্তিগত স্টুডিও আছে। এই স্টুডিও থেকেই তিনি নিজের জন্য ও অন্য জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য অনেক গান সুর ও সঙ্গীত আয়োজন করেছেন।
অসুস্থতা: ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর ফুসফুসে পানি জমার কারনে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।সুস্থ হয়ে আবার গানের জগতে ফিরে আসেন।কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন।২০০৯ সালে তার হার্টে রিং পরানো হয়।
শেষ কনসার্ট: সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর ২০১৮ রংপুর জেলা স্কুলে ‘শেকড়ের সন্ধানে’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানে কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ঢাকায় ফিরে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন আইয়ুব বাচ্চু।
মৃত্যু: ১৮ অক্টোবর ২০১৮ সকালে হার্ট অ্যাটাকের কারণে বাংলা ব্যান্ডের এই মহাতারকার মৃত্যু হয়।তার জীবন ছিলো অনেকটা তার গানের কথার মতোই-
হাসতে দেখ গাইতে দেখ,অনেক কথায় মুখর আমায় দেখ
দেখনা কেউ হাসি শেষে নিরবতা.........
আমরা তার নিরবতা বুঝতে পারিনি তাইতো বুক ভরা অভিমান নিয়ে নিরবেই চলে গেলেন তিনি।
পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube
No comments
পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।