আসামের ইতিহাস, ঐতিহ্য,সংস্কৃতি ও বাঙালী মুসলমানদের ভাগ্য !
বিহুর এ লগন,মধুর এ লগন
আকাশে বাতাসে লাগিলো রে......
বিহু উৎসবের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।কিন্তু এই বিহু উতসব কারা পালন করেন জানেন?আসামের লোকেরা। বিহু হল আসামের মানুষদের প্রধান উৎসব। জাতি, ধৰ্ম, বৰ্ণ নির্বিশেষে অসমিয়ারা বিহু পালন করে।অবাক হয়েছেন?এরকম আর অনেক অবাক করা তথ্য রয়েছে আসাম সম্পর্কে।চলুন প্রতিবেশী দেশের এই রাজ্য সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জেনে নেই।

ইতিহাস
বহু শতাব্দীর রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিবর্তন ধারায় গঠিত বঙ্গ, বাংলা, বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশকে বিভক্ত করে ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।কিন্তু স্বদেশী আন্দোলন, বিপ্লবী সন্ত্রাসী আন্দোলন ও কংগ্রেস-এর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এর ফলে ১৯১১ সালে সরকার ডিসেম্বর মাসে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। আসামকে আবার আগের মতো কমিশনারের শাসনাধীনে নেয়া হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আসাম সহ পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতে অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হতে শুরু করে। যার ফলে ওই অঞ্চলে সার্বভৌমত্ব দাবী করে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ভাষা আন্দোলন
বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই আসামে অধুনা বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীরা আসতে শুরু করে। ১৯৬১ সালে মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চালিহার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পরিচালিত আসাম সরকার বিধানসভায় একটি বিল পাশ করে, যার মাধ্যমে পুরো রাজ্যে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে অসমীয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দক্ষিণ আসামের কাছাড় জেলার বাঙালিরা ভাষা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬১ সালের ১৯ মে তারিখে এই ভাষা আন্দোলন চলাকালীন আধা-সামরিক বাহিনীর গুলিতে এগারোজন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। এর পরে চাপের মুখে ভাষা বিলটি প্রত্যাহৃত হয়।
বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের পর থেকে আসামে বিভিন্ন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যথা, আলফা এবং ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড ইত্যাদি জন্ম নেয়।
মুসলিম গণহত্যার নির্মম ঘটনা
১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে, আসামে নির্বাচন কমিশন ৪৫ হাজার বিদেশী ভোটারকে ভোটের অধিকার দেন । ঘটনার শুরুটা এখানেই। অল আসাম স্টুডেন্ট ফোরাম ঘোষণা করে বিদেশীদের ভোটার হিসাবে এদের অন্তর্ভুক্ত করলে আসামে রক্তের হলী খেলা বয়ে দেয়া হবে। শুরু হয় বাংলাদেশী খেদাও আন্দোলন।এবং ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ সালে। এই হত্যা যজ্ঞে ৫০০০ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল যার মধ্যে ৩৫০০-ই ছিল শিশু(মুসলিম)। এ হত্যাকান্ডের এখনো একটিরও বিচার হয়নি। গণহত্যার মূল শিকার ছিল ৭১ এর যুদ্ধে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী মুসলমানরা। আসামের ১৪ টি গ্রামে এই হত্যা যোগ্য চালানো হয় গ্রাম গুলো সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়,তার মধ্যে একটি ছিল Nellie। এই নির্মম হত্যার পর ভারত সরকার জুলুমের শিকারদের মাত্র ৫০০০ টাকা ধরিয়ে দেয়। ৩১০ টি মামলা হয় এই জঘন্য হত্যাকারিদের কিন্তু কোনটিরই পরে মিমাংশা হয়নি এবং অপরাধীরা কোন শাস্তি পায়নি।
১৯৭১-এ পাকিস্তনিদের নির্মম পাশবিক হত্যাযজ্ঞের জন্য আমরা তাদের হায়না, পিশাচ ইত্যাদি উপাধি দিয়েছি।কিন্তু এই নিষ্পাপ শিশুদের যারা হত্যা করেছে তাদের আমরা কি উপাধি দিব?
বর্তমান পরিস্থিতি
এনআরসির চূড়ান্ত তারিকা প্রকাশ উপলক্ষে বর্তমানে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে আসাম। প্রথম তালিকায় প্রায় ৭০ শতাংশ বাঙালির নাম বাদ গিয়েছিল। তাই রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী বাঙালি নাগরিকদের উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি। ভিটেমাটি তো রয়েছেই, পাশাপাশি দেশ হারানোর ভয় তাদের জেঁকে ধরেছে। এনআরসিতে নাম তালিকাভুক্ত করতে আসামের ৬৮ লাখ ২৭ হাজার পরিবার থেকে ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ আবেদন করেন। প্রথম দফায় গত ৩১ ডিসেম্বর মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ নাম ঠাঁই পায় এনআরসিতে। তাই এবার তালিকা প্রকাশের আগে উত্তেজনা তুঙ্গে।
পর্যটন
আসামের দাঙ্গা ও সংঘাত কে পেছনে ফেলে হারিয়ে যেতে পারেন এর অপরুপ সৌন্দর্যে।আসামের লাল নদের ব্রহ্মপুত্র, নীল পাহাড়ের হিমালয় পর্বতমালা,কামাক্ষা মন্দির,শিলং, গৌহাটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ।
এখানকার অমায়িক মানুষ,বিভিন্ন আদিবাসী সংস্কৃতি এবং আসামের চমৎকার সুবাস যুক্ত এক কাপ চা আপনার ভ্রমণকে চিরস্মরণীয় করে তুলবে।
পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube
ইসলামিক মৌলবাদ নিয়ে কিছু লিখুন
ReplyDelete