বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ ও সম্ভাবনা !
সে সকল পদার্থ মাটির নিচে পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকে এবং যেগুলো উত্তলোন করে ব্যবহার করা যায় তাকে খনিজ সম্পদ বলে।
ভূ-পৃষ্ঠে অথবা ভূগর্ভের কোনো স্থানে সঞ্চিত খনিজ সম্পদের অবস্থান মূলত সংশ্লিষ্ট স্থানের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সময়কাল দ্বারা নির্ণীত হয়ে থাকে।ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারনে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ।বাংলাদেশের যে পরিমাণ খনিজ সম্পদ আছে তা কাজে লাগাতে পারলে আমাদের দেশের অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।বাংলাদেশের প্রধান প্রধান খনিজ সম্পদগুলো হোল প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, নুড়িপাথর, গন্ডশিলা কাচবালি, নির্মাণকার্যে ব্যবহূত বালু, চীনামাটি, ইটের মাটি, পিট এবং সৈকত বালি।চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে।
গ্যাস: বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আকৃতির ২২টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে ২০টি গ্যাসক্ষেত্রে পরিমাপকৃত গ্যাসমজুতের পরিমাণ প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।বর্তমানে দেশে ব্যবহূত মোট বাণিজ্যিক জ্বালানির ৭০ ভাগই প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বারা মেটানো হচ্ছে এবং ভবিষ্যত জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগ এ খাত থেকেই পূরণ হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বাধিক ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে যার পরিমাণ মোট ব্যবহারের ৪৪ শতাংশ, যার মাধ্যমে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬৮ শতাংশ পাওয়া যায়। এর পরেই রয়েছে সার উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার যার পরিমাণ মোট ব্যবহারের ২৮ শতাংশ এবং শিল্প, গৃহস্থালী, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য খাতে গ্যাসের ব্যবহার ২২ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে এবং দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ ৯০০ থেকে ৯৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।
তেলক্ষেত্র: দেশের একমাত্র খনিজ তেলক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে। এ তেলক্ষেত্রে তেলের মোট মজুতের পরিমাণ প্রায় ১০ মিলিয়ন ব্যারেল যার মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ প্রায় ৬ মিলিয়ন ব্যারেল। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে হরিপুর তেলক্ষেত্র থেকে তেল উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরুর পরবর্তী সাড়ে ছয় বছরে এ তেলক্ষেত্র থেকে ০.৫৬ মিলিয়ন ব্যারেল খনিজ তেল উৎপাদন করা হয়। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাস থেকে তেল উৎপাদন স্থগিত হয়ে যায়।
কয়লা: ১৯৫৯ সালে ভূ-পৃষ্ঠের অত্যধিক গভীরতায় সর্বপ্রথম কয়লা আবিষ্কৃত হয়।এ পর্যন্ত মোট ৫টি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাখনির মধ্যে অন্যতম বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে।বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তোলনযোগ্য মজুত ৬৪ মিলিয়ন টন এবং বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ মিলিয়ন টন। উত্তোলিত কয়লা ব্যবহার করে ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র খনির অদূরে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
চুনাপাথর: ১৯৬০-এর দশকের প্রথমভাগে দেশের উত্তর-পূর্বভাগে অবস্থিত টাকেরঘাট এলাকায় ইয়োসিনযুগীয় চুনাপাথরের একটি ক্ষুদ্র মজুত থেকে চুনাপাথর আহরণ করে তা একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে সরবরাহ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটিই ছিল দেশের প্রথম খনি যেখান থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ করা হয়।
গ্রানাইট: বাংলাদেশের জন্য গৌরবের যে, বিশ্বের একমাত্র গ্রানাইট খনিটি বাংলাদেশেই রয়েছে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথরখনিও। গ্রানাইট হচ্ছে বাড়ি নির্মাণে ব্যবহৃত উচ্চমানের কঠিন পাথর। মার্বেল পাথর তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি বাংলাদেশের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ, যা দেশের অর্থনীতিতে ও উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম। সাম্প্রতিক সময়ে এই খনিতে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় পাথর উত্তোলন বেড়েছে। প্রতিদিন তিন শিফটে চার হাজার টন গ্রানাইট শিলা উৎপাদন হচ্ছে, যা আগামীতে বেড়ে দৈনিক কুড়ি হাজার টন হবে। মান ভাল হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে এই পাথর।
ধাতব খনিজ: খনিজ মজুত অনুসন্ধান চালিয়ে জি.এস.বি বেশ কটি সম্ভাব্য ধাতব খনিজ বলয় চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের উত্তরপশ্চিম অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ নমুনা থেকে চ্যালকোপাইরাইট, বোর্নাইট, চ্যালকোসাইট, কোভেলাইন, গ্যালেনা, স্ফালারাইটের মতো ধাতব খনিজ পাওয়া গেছে।
চীনামাটি: চীনামাটি বলতে মূলত কেয়োলিন কাদা মণিক দিয়ে গঠিত সিরামিক শিল্পে ব্যবহার্য উন্নতমানের কাদাকে বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চীনামাটির উল্লেখযোগ্য মজুত রয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের সামান্য নিচে নেত্রকোণা জেলার বিজয়পুর, শেরপুর জেলার ভুরুংগা, চট্টগ্রাম জেলার হাইটগাঁও, কাঞ্চপুর, এলাহাবাদ এবং ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টন চীনামাটির মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে।
পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube
No comments
পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।