কোরবানির ইতিহাস ও মুসলমানদের করনীয়!
কিছুদিন পরেই ঈদ উল আজহা।এখানে ঈদের সাথে আজহা শব্দটি যুক্ত হয়েছে যার অর্থ যার অর্থ হলো ত্যাগ বা কোরবানি।যার পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় ত্যাগের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ। ত্যাগের এই আনন্দ পৃথিবীর অনেক দেশে ঈদুল কোরবানি নামেও পরিচিত। ত্যাগ ও কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রতি বছর আগমন ঘটে মহান ঈদুল আজহার। ঈদুল আজহা বয়ে নিয়ে আসে অনুপম, অনন্য ত্যাগের মাধ্যমে নির্মল আনন্দ।
কোরবানি শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত আরবি ভাষার একটি শব্দ। কোরবানির অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, সান্নিধ্য লাভ করা। কোরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।কোরবানি যখন একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার নিমিত্তে হবে তখন এ কোরবানি নাজাতের কারণ হবে। পক্ষান্তরে যদি উদ্দেশ্য ভিন্ন হয় যেমনলোক দেখানো কিংবা গোশত খাওয়া তখন তা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চিন্তা অবাস্তব। আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘অর্থাৎ আল্লাহর নিকট কোরবানির গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, কেবল তোমাদের আন্তরিকতা বা তাকওয়া পৌঁছে।’ -সূরা হজ : ৩৭
কোরবানির প্রচলন হয় আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর সময় থেকে। তখনকার নিয়মানুযায়ী দু’টি করে সন্তান হতো- এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ছেলের সঙ্গে দ্বিতীয় কন্যার বিয়ে দেওয়া হতো। বিয়ে নিয়ে আদম (আ.)- এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মাঝে দ্বন্দ্ব হলে আল্লাহর ফয়সালার ব্যাপারে হজরত আদম (আ.) তার দুই সন্তানকে আহবান জানান। আল্লাহতায়ালা দুই সন্তানকে কোরবানি করার নির্দেশ দিলে তারা দুই পাহাড়ের চূড়ায় নিজেদের কোরবানির বস্তু রেখে আসে। তখনকার নিয়মানুযায়ী যার কোরবানি কবুল হতো তার বস্তু আসমান থেকে আগুন এসে ঝলসে দিতো; ফলে তার কোরবানি কবুল হয়েছে বলে প্রমাণিত হতো। এভাবেই হাবিলের কোরবানি আগুন এসে ঝলসে দিলে তার কোরবানি আল্লাহ কবুল করেছেন বলে নির্ধারিত হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘আর আপনি পাঠ করুন তাদের নিকট আদমের দুই সন্তানের ঘটনা যখন তারা দু’জন কোরবানি উপস্থিত করলো তখন আল্লাহ তাদের একজনের কোরবানি গ্রহণ করলেন এবং অপরটা গ্রহণ করলেন না।’ -সূরা মায়িদা : ৩৪। এটাই ছিল কোরবানির সূচনালগ্ন।
বর্তমানে সারা বিশ্বে মুসলমানরা যে কোরবানি পালন করে তার সূচনা হয়েছিলো হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘরে তার বার্ধক্য বয়সে আল্লাহ একটি পুত্রসন্তান দান করেন, তার নাম ছিল হজরত ইসমাইল (আ.)। একদা হজরত ইবরাহিম (আ.) নির্দেশপ্রাপ্ত হন তিনি যেন প্রিয় বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি প্রথমে ১০টি উট আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে পরের রাতে একই স্বপ্ন পুনরায় দেখতে পেয়ে তিনি ১০০টি কোরবানি করেন। তৃতীয় রাতে একই স্বপ্ন দেখলে তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে তার প্রিয় বস্তু পৃথিবীতে একমাত্র তার সন্তান ইসমাইল। হয়তো তাকেই কোরবানি করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন।
এ প্রেক্ষিতে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর আমি তাকে একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম। সে যখন পিতার সঙ্গে হাঁটা চলার উপযোগী হলো। তিনি (ইবরাহিম) বললেন, হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কী? সে (ইসমাইল) বললো, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর ইচ্ছায় ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। অতঃপর যখন তারা দু’জন একমত হলো- তাকে আহবান করলাম, হে ইবরাহিম! তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে রূপ দিয়েছ। আমি এভাবেই সৎপরায়ণ ব্যক্তিদের বিনিময় দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল স্পষ্ট একটি পরীক্ষা। অতঃপর আমি তাকে দান করলাম একটি মহা কোরবানির পশু।’ -সূরা সাফফাত : ১০১-১০৯
কোরবানি যেহেতু মুসলিম জাতির একটি ঐতিহ্য। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলের কতিপয় সাহাবা রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলো কোরবানি কী? তিনি বললেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিমের সুন্নত। তারা বললো, এতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? তিনি বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি। তারা বললো, ভেড়ারতো অসংখ্য পশম থাকে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে, যদি তা কোরবানি করে। -ইবনে মাজাহ।
মানুষ আল্লাহকে কতটুকু ভালবাসে তার একটি পরীক্ষা হয়ে যায় এ কোরবানি দ্বারা। কারণ কোরবানির সূচনাই হয়েছে তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে। হজরত ইবরাহিম (আ.) তার সন্তানকে কোরবানি করতে আল্লাহ কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি বরং স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়েছেন। তিনি তাকওয়ার চরম শিখরে পৌঁছেছেন বলেই স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেননি।
তাই লোক দেখানো কোরবানি থেকে বিরত থেকে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত পশু কোরবানি দেয়ার পাশাপাশি মনের পশুকেও কোরবানি দেয়া। যা কোরবানির বিধানের মূল উদ্দেশ্য ও অন্তর্নিহিত শিক্ষা।
পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube
No comments
পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।