ডাইনোসরের সম্পূর্ণ ইতিহাস!
আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যতো প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিষ্ময়কর এবং আলোচিত প্রাণী হলো ডাইনোসর। প্রাণিবিজ্ঞানীদের ধারণা, আজ থেকে প্রায় ২৩ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে ডাইনোসরদের আগমন ঘটে। তারপর প্রায় ১৬ কোটি বছর এরা পৃথিবীতে রাজত্ব করে। তাদের রাজত্বকালের এ সময়টাকে বলা হয় জুরাসিক যুগ । ডাইনোসর বলতে কোনো বিশেষ প্রাণীকে বোঝানো না, বরং প্রায় হাজার রকমের প্রাণীর একটি সমষ্টিকে বোঝায়। এই বিষ্ময়কর প্রাণীর কথা আমরা জানতে পেরেছি ১৯ শতকের প্রথম দিক।
* দৈহিক গঠন ও প্রকারভেদঃ ডাইনোসরদের দৈহিক গঠনে অনেক বৈচিত্র্যতা ছিল। সরীসৃপ জাতীয় ডাইনোসরগুলো বর্তমানের সাপ, কুমির ও লিজার্ডদের মতোই ছিল। তাদের চামড়া ছিল আঁশযুক্ত। ডাইনোসরদের প্রধান দুটি ভাগ ছিল- ওরনিথিশিয়ানস বা পাখি জাতীয় এবং সোয়ারিশিয়ানস বা সরীসৃপ জাতীয়। প্রাণি বিজ্ঞানীদের মতে, ১০টি হাতির সমান বৃহদাকার থেকে শুরু করে মুরগির সমান পর্যন্ত ডাইনোসর ছিল পৃথিবীতে। সবচেয়ে বড় ডাইনোসরটির নাম ‘সরোপড’। এদের ছিল লম্বা গলা ও লেজ। মাথার আকার ছোট হলেও দেহ ছিল বিশাল। এ প্রজাতির সবচেয়ে সবড় সদস্যর নাম ‘অ্যামফিসোইলিয়াস প্র্যাগিলিমাস’। এরা ২০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা ছিল এবং এদের ওজন ছিল ১২২ টন। সবচেয়ে ছোট ডাইনোসর ছিল পারভিকিউরসর রেমুটাস। এর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) এবং এর ওজন ছিল ১৬২ গ্রাম। অধিকাংশ ডাইনোসরেরই পা ছিল। কিছু ডাইনোসর ছিল দ্বিপদী আবার কিছু ছিল চতুষ্পদী। কোনো কোন ডাইনোসরের সামনের এবং পেছনের পাগুলো ছিল বেশ মোটা এবং প্রায় সমান। আবার কিছু ডাইনোসরের পেছনের পাগুলো ছিল বিশাল লম্বা এবং সামনের পাগুলো খুবই খাটো, অনেকটা ক্যাঙ্গারুর মতো। এরা পেছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে দৌড়াতো। জলে বাস করা ডাইনোসরগুলো ছিল বিশালাকৃতির।
* আবিষ্কারঃ ডাইনোসর আবিষ্কারক হিসেবে প্রথমেই যার নামটি বলা যায়, তিনি হলেন ইংরেজ প্যালিওনটোলজিস্ট রিচার্ড ওয়েন। তিনি ১৮৪২ সালে ডাইনোসর নামকরণটি করেন। এছাড়া উল্লেখযোগ্য আরেকজন হলেন, গিডিয়ন ম্যান্টেল। চিকিৎসক ম্যান্টেল প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর হাড়ের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে বলেছিলেন, প্রাণীটি হয় সমুদ্রের দানব লিজার্ড, নয়তো লিজার্ড জাতীয় কোন ৭০ ফুট লম্বা প্রানী। অন্যদিকে ওয়েন বলেন, এটি লিজার্ড জাতীয় হলেও এর পায়ের ওপর ভর রেখে হাঁটাচলা করার ক্ষমতা ছিল। ফলে ম্যান্টেল ও ওয়েনের মধ্যে শুরু হয় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। পরবর্তীকালে জীবতত্ত্ববিদ ডেবরা কাডবেরি বলেন, ম্যান্টেলই ডাইনোসরের আবিষ্কর্তা। ডেমবা আরও বলেন, ডাইনোসরের আবিষ্কর্তা চারজন। প্রথম আবিষ্কর্তা হলেন, ১৮১২ সালের ডোরমেটের এক দরিদ্র মহিলা মেরি আর্নিং। তিনি একদিন একটি সরীসৃপের কঙ্কাল পান, যা ডাইনোসরের না হলেও ডাইনোসর আবিষ্কারের প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় আবিষ্কর্তা হলেন, গিডিয়ন ম্যান্টেল। ১৯৭১ সালে একটি হাড়ের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে তিনি প্রমাণ করেন যে, এটি কোনো এক বিশাল সামুদ্রিক লিজার্ডের হাড়ের অংশ। তৃতীয় আবিষ্কর্তা হলেন, রেভারেন্ড উইলিয়াম ব্যাকল্যান্ড। তিনি ১৮২৪ সালে একটি প্রবন্ধে বৃহদাকার সরীসৃপ সম্পর্কে প্রথম উল্লেখ করেন। চতুর্থ আবিষ্কার হলেন, ম্যান্টেলের স্ত্রী মেরি। তিনি ১৮২৫ সালে একটি দাঁত কুড়িয়ে পান, যেটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, আগের পাওয়া হাড়ের জীবাশ্মটির সাথে এর খুব মিল রয়েছে। ফলে ১৮১৭ সাল থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ম্যান্টেল প্রমাণ করেন, গিরগিটি জাতীয় একটি বিশাল প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী এ পৃথিবীতে বসবাস করতো।
* নামকরণঃ ১৮২৪ সালে ইংল্যান্ডের ইউলিয়াম বাকল্যান্ড প্রথমবারের মতো এ প্রাণীদের নামকরণ করেন ‘মেগালোসোরস’। পরের বছরই গিডিয়ন ম্যাল্টেন এই প্রাণীদের নাম দেন ইগুয়ানোডন। ১৮২৪ সালে রিচার্ড ওয়েন যুক্তি দেখালেন, মেগালোসরস ও ইগুয়ানোডন আসলে একই প্রজাতির প্রানী। তিনি এসব প্রাণীর অভিন্ন নামকরণ করেন ‘ডাইনোসর’।
* খাদ্যঃ বেশিরভাগ ডাইনোসর ছিল তৃণভোজী। লম্বা গলাওয়ালা বিশালাকৃতির ডাইনোসররা উঁচু গাছের পাতা খেতো। খুব কম প্রজাতির ডাইনোসরই ছিল মাংসভোজী। মাংসাশী ডাইনোসরদের ছিল ধারালো নখ আর দাঁত। ‘অ্যালোসোরস’ ও ‘টাইরানোসোরস’দের মতো মাংসাশী ডাইনোসররা অন্যক প্রাণীদের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। মাংসাশী ডাইনোসররা অন্য ডাইনোসরদেরও আক্রমণ করতো এবং এদের মাংস খেতো।
* শিকার ধরাঃ
১. হঠাৎ আক্রমনঃ- বিশালাকৃতির জাইগানোটোসরাস ধীর গতির তৃণভোজী প্রাণীর আশায় গাছের পেছনে লুকিয়ে থাকতো। যেই কোনো তৃণভোজী প্রাণী তাদের সম্মুখভাগ দিয়ে যেতো অমনি অতর্কিত আক্রমন করে এদের চোয়ালের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতো।
১. হঠাৎ আক্রমনঃ- বিশালাকৃতির জাইগানোটোসরাস ধীর গতির তৃণভোজী প্রাণীর আশায় গাছের পেছনে লুকিয়ে থাকতো। যেই কোনো তৃণভোজী প্রাণী তাদের সম্মুখভাগ দিয়ে যেতো অমনি অতর্কিত আক্রমন করে এদের চোয়ালের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতো।
২. কম্পসোগন্যাথাস ছিল অত্যন্ত দ্রুতগতির ডাইনোসর। এরা এদের গতি দিয়ে দৌড়ে শিকার ধরে ফেলতো। অধিকাংশ মাংসাশী ডাইনোসরদের চোখ ছিল তাদের মাথার পাশে। এতে তাদের দৃষ্টি প্রশস্ত হতো এবং শিকার শনাক্ত করতে সুবিধা হতো।
* আতœরক্ষাঃ ডাইনোসররা আতœরক্ষায় নানা কৌশল অবলম্বন করতো। কিছু ডাইনোসরের পুরো দেহ মোটা চামড়ার আবরণে ঢাকা থাকতো এবং সারা দেহে বড় বড় কাঁটা থাকতো। এ কাঁটাগুলোই এদের আতœরক্ষায় সাহায্য করতো। কিছু ডাইনোসরের লেজের শেষ প্রান্তে বিশাল একটি মুগুর থাকতো। আক্রমণকারীকে এই মুগুর দিয়ে এরা আঘাত করতো। কিছু ডাইনোসরের লেজটি ছিল সরু চাবুকের মতো। এই লেজের বাড়ি দিয়েই এরা শত্রুপক্ষকে ধরাশায়ী করে ফেলতো। কিছু ডাইনোসরের মাথায় এক বা একাধিক বিশালাকৃতির শিং থাকতো। এই শিং দিয়ে করা এদের শিকারিকে প্রচন্ড আঘাত করতো। এভাবেই এরা আতœরক্ষা করতো।
* ডাইনোসর কি সাঁতরাতে পারতো? না, ডাইনোসর সাঁতরাতে পারতো না। কিন্তু যখন ডাইনোসররা স্থলভাগে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল তখন সামুদ্রিক সরীসৃপরা সাগরে রাজত্ব করে বেড়াতো। সমুদ্রে বাস করা ইকথাইওসর, প্লিওসর, প্লেসিওসর, প্ল্যাকোডন্ট এবং মোসাসর ছিল মাংসাশী। এরা অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী এমনকি একে অপরকেও শিকার করে খেতো। শ্বাস নেওয়ার জন্য এদের বাতাসের প্রয়োজন হতো। তাই তারা ফুসফুসে বাতাস ভরার জন্য সমুদ্রের পানির ওপরিভাগে সাঁতার কাটতো।
* বৈশিষ্ট্যঃ বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরকে পাখি ও সরীসৃপদের আদি পুরুষ বলে মনে করেন। তাই কিছু কিছু ডাইনোসরের যেমন ছিল বর্তমানে সরীসৃপদের মতো শীতল রক্ত, তেমনি কিছু কিছু ডাইনোসরের ছিল উষ্ণ রক্ত। তবে তাদের বুদ্ধি ছিল কম। কোনো কোনো ডাইনোসর আবার দুটি মস্তিষ্কেরও অধিকারী ছিল। অধিকাংশ ডাইনোসর চার পায়ে হাঁটতো, তবে কিছু কিছু ডাইনোসর হাঁটতো ক্যাঙ্গারুর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে। ডাইনোসররা ডিম পাড়তো। এরা ডিম পাড়ার জন্য বাসা তৈরি করতো।
পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube
No comments
পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।