আমাজন রেইন ফরেস্টের অজানা রহস্য !

অবস্থান
দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডরসহ মোট সাতটি দেশ জুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সপ্তাচর্য আমাজন বন। আমাজন বনের আয়তন প্রায় ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার। এবনের শতকরা ৬০ ভাগ পড়েছে ব্রাজিলে। বাকি অংশের মধ্যে ১৩ ভাগ বন পড়েছে পেরুতে। আর বাকি অংশ ভেনিজুয়েলাসহ প্রতিবেশী ৫টি দেশজুড়ে বিস্তৃত।
নামকরন
পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য আমাজন রেইনফরেস্ট।এই আমাজন নামটি এসেছে এক যুদ্ধের পটভূমি থেকে। ফ্রান্সিস্কো ড্যি ওরেলানা গোত্রের সাথে টেপিউস আর কয়েকটি গোত্রের যুদ্ধ বেঁধেছিল। রীতি অনুযায়ী, ওরেলানা গোত্রের মেয়েরাই টেপিউসসহ অন্যদের পুরুষ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। গ্রিকপুরানের এমাজোনাস থেকেই ওরেলানার গণকরা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল আমাজোনাস। সেখান থেকেই পুরো বনের নাম হয়ে যায় আমাজন। এর পাশে বয়ে চলা নদীর নামও হয়ে যায় আমাজন নদী।
আমাজন রেইনফরেস্টের বসবাসকারী উপজাতি
বিশাল আমাজন বন এলাকায় এলাকায় প্রায় ৩০০ উপজাতি গোষ্ঠী বাস করে। এদের মধ্যে প্রায় ৭০টি গোষ্ঠীর বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও বাকি গোষ্ঠীগুলো বলা যায় সভ্য জগতের সঙ্গে সম্পর্কহীন। এক হিসেবে দেখা গেছে, ২ লাখেরও বেশি মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস করেন। আমাজনবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্রাজিলিয়ান ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া অনেকেই স্প্যানিশ ভাষায়ও কথা বলেন। তবে তাদের অনেক গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাও রয়েছে।
আমাজন বনের জীববৈচিত্র্য
আমাজনকে রেইনফরেস্ট বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই না যে এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়। বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং গরম আবহাওয়ার কারনে। প্রচন্ড গরমের কারনে এখানে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি যা আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার অন্যতম কারন।
এই গরম আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতার কারনে এ বনে উদ্ভিদ ও প্রানিকুলের বৈচিত্রময় সমাহার দেখা যায়। এখানে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট-পতঙ্গ ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানি সহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব-অনুজীব। এখানকার প্রানিবৈচিত্র অতুলনীয়। অবাক করা ব্যাপার হল হাজারো রকমের প্রানির সমাহার থাকলেও এখানকার ইকোসিস্টেম অত্যন্ত শক্তিশালী যা মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে।
এই বনের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাগুয়ার, গোলাপি ডলফিন,তামানডুয়া, তাপির, মানাতি, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি,বাদুড় ইত্যাদি।
পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঈগল, টুকান, হোয়াটজিন, দ্রুতগামী হামিং বার্ড এবং আরো রঙ-বেরঙের অনেক পাখি। পৃথিবীর সকল পাখির এক পঞ্চমাংশ পাখি এই বনের অধিবাসী।
মাছের মধ্যে আছে মাংসাশী লাল পিরানহা, বিপদজনক বৈদ্যুতিক মাছ এবং স্বাদু পানির অন্যতম বড় মাছ-পিরারুকু, যার ওজন ১৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। উভচর প্রানির মধ্যে লাল চোখ বিশিষ্ট গেছো ব্যাঙের নাম না বললেই নয়। সরিসৃপের মধ্যে আছে বিখ্যাত সাপ বোয়া যা তার শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। তাছাড়া রয়েছে কুমির, অ্যালিগেটর, কচ্ছপ প্রভৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়া, হাতের তালুর সমান বড় তেলাপোকা, রঙ-বেরঙের প্রজাপতি, শুঁয়োপোকা আর জানা অজানা হরেক রকমের পোকা-মাকড়ের বসতি এই আমাজনে।
ক্ষতিকর প্রাণী
বিভিন্ন জীবের পাশাপশি আমাজন বনে কিছু ক্ষতিকর প্রানিও আছে।তাদের মধ্যে পিরানহা, রক্তচোষা বাদুর, বিষাক্ত ব্যাঙ, বৈদ্যুতিক মাছ, রেবিস, ম্যালেরিয়া, ইয়েলো ফিভার, ডেঙ্গু ফিভারের জীবানু উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া জাগুয়ার এবং অ্যানাকোন্ডা-ও অনেক সময় বিপদের কারন হতে পারে।
আমাজন নদী
আমাজনের কথা উঠলে আমাজন নদীর নামও অবধারিতভাবে চলে আসে। বলা হয়, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ১২ বছরে যত পানি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন কাজে কিংবা আশেপাশের নদীতে প্রবাহিত হয়, আমাজনের নদীতে একদিনেই তার চেয়েও ১৮হাজার কিউসেক লিটার বেশি পানি প্রবাহিত হয়। এই নদীর বুক দিয়ে প্রবাহিত এত পরিমাণে সুমিষ্ট পানি আশেপাশের সমুদ্রে গিয়ে মেশে যে, প্রায় ১২৭ মাইল পর্যন্ত সেসকল সমুদ্রের পানি কম লবণাক্ত থাকে। পৃথিবীর মোট ২৫% স্বাদু পানি আসে আমাজন থেকেই।শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আমাজন নদী একসময় প্রবাহিত হত প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে। ভু-প্রাকৃতিক বৈশিষ্টের কারনে গতিপথ বদলে এখন প্রবাহিত হচ্ছে আটলান্টিক মহাসগরের দিকে!
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
· পৃথিবীর ২০% অক্সিজেনের আঁতুড় ঘর হল আমাজান বন।
· দক্ষিণ আমেরিকার নয়টি দেশ নিয়ে আমাজানের বিস্তৃতি।
· আমাজন বনেই থাকে বানরখেকো ‘হার্পি ঈগল’ আর বিখ্যাত ‘ম্যাকাও’ পাখি।
· বিশ্বের মোট ওষুধের ২৫% আসে আমাজন বনের ৪০০ প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে।
আমাজন হল প্রকৃতির দেয়া এমন এক উপহার যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আমাদের সাবধান থাকতে হবে যেন এই রহস্যে ভরা বন কে জয় করতে যেয়ে আমরা একে ধ্বংসের মুখে না ফেলে দেই।আমাজনের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই নয়তো বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
পোস্টটি লিখেছেন
আমি জয়। আমি এই ব্লগের এডমিন। ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের একজন ছাত্র। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছি। আমি ব্লগ লিখি এবং আমি একজন ইউটিউবার। এর পাশাপাশি আমি গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করি। ঘুরে বেড়ানো এবং সিনেমা দেখা আমি খুব পছন্দ করি।
Follow her @ Twitter | Facebook | YouTube
No comments
পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনাদের কোন সমস্যাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতটুকু সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ।